ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে লেখ। তোমাদের বিদ্যালয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কীভাবে পালন করা হয়েছিল তার একটি পর্যায় ক্রমিক বর্ণনা দাও।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন সংগঠনের সঠিক ঘটনাবলি তুলে ধরা হল
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।
তোমাদের বিদ্যালয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কীভাবে পালন করা হয়েছিল তার একটি পর্যায় ক্রমিক বর্ণনা দাও।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচির।
১। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে আই.ই.টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রভাতফেরী, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর ও রক্তদান কর্মসূচি।
২। ভোর ৬টায় ছাত্রছাত্রীরা খালি পায়ে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে। এরপর কলেজের শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
৩। সকাল ৮টায় শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ” আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বেশ কয়েকজন জাতীয় অধ্যাপক। এছাড়া কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে।
৪। আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে শুরু হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণ। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো: ইরফান উর রহমান এর লেখা “ চেতানায় মায়ের ভাষা” কবিতাটি সবার মন কেড়ে নেয়।
৫। সন্ধানীর সহযোগিতায় বিকেলের রক্তদান কর্মসূচির আয়োজনটি ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি উৎসর্গ করায় এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
৬। পরিশেষে ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
৭। সার্বিক বিচারে অনুষ্ঠান অত্যন্ত গোছানো ও মার্জিত ছিল।