Assignment

ই-লার্নিং কি ? এর ধারণা, সুবিধাসমুহ ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন

ভুমিকাঃ

প্রতিদিনই বিশ্বব্যাপী উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে দুনিয়া। সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে প্রচলিত ও প্রথাগত অনেক কিছুই। সর্বত্র কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের হাত ধরে নিত্যদিন ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। একটি কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ফোন আর তার সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বিশ্বের যে কোন জায়গায় বসেই যে কোন বিষয়ের ওপরে দক্ষতা অর্জন করা আজ মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

ই-লার্নিং কি

তাই দেশিয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে ই-লার্নিং এখন বহুল আলোচিত বিষয়। ধরাবাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে হওয়ায় ক্রমশ এবং দ্রত ই-লার্নিং এখন একটি জনপ্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা। দুনিয়াব্যাপী এর জয় জয়জয়কার। প্রথাগত বা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাশ করা কিংবা কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার পদ্ধতিই হলো ইলেকট্রনিক লার্নিং বা ই-লার্নিং।

ই-লার্নিং এর ধারণা

ই-লার্নিং এর অর্থ হলো ইন্টারনেট থেকে শিক্ষা নেয়া। অর্থাৎ আমরা যদি ইন্টারনেট থেকে কোনো কিছু শিখে থাকি তাহলে সেটাই ই-লার্নিং। ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে ‘ই’ অর্থ ‘ইলেক্ট্রনিক’ বুঝায় অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শিক্ষা বা ইলেকট্রনিক শিক্ষা। এ শিক্ষাটি মূলত অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্লাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন ধরনের কোর্স দেওয়া থাকে, আপনি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক লার্নিং ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এলিয়ট মাইসি ১৯৯৯ সালে “eLearning” শব্দটি তৈরি করেছিলেন, পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটারের সূচনার ব্যপকতা এবং সময়ের পালাক্রমে স্মার্টফোন, ট্যাবলেই ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ার ফলে ই-লার্নিং বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয় এবং মানুষ এটিকে সহজেই গ্রহণযোগ্য করে তুলে।

ই-লার্নিং এর সুবিধাসমুহ

এ ব্যবস্থার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হলো, নিজের ঘরে বসেই ক্লাশ করা, অভীক্ষার মুখোমুখি হওয়া এবং সনদপত্র অর্জন করা খুব সহজেই সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে এখন লিন্ডা, কোর্সেরা, ইউডেমি, ইউডাসিটির মত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের সুখ্যাতির কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।

বর্তমান সময়ে e-learning এর জনপ্রিয়তা খুব বেশি। মানুষ এখন তার বাসায় বসে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কোর্স এবং দক্ষতামূলক কোর্স করতে পারে।

  1. এটি অনলাইনে কোর্স সরবরাহ করার একটি খুব দক্ষ উপায়। যেখানে আপনি সহজেই রেজিস্টার ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন সরবরাহ করে অনলাইনে কোর্স করতে পারবেন।
  2. শারীরিক শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন নেই, অনলাইনে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ক্লাস করার সুযোগ।
  3. যারা চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ই-লার্নিং ভিত্তিক কোর্স।
  4. আপনার ব্যয় হ্রাস করতে আপনি চাইলে ই-লার্নিং কোর্স ব্যবহার করতে পারেন।
  5. অনেকেই আছেন সময়ের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ডিগ্রীটি অর্জন করতে পারছেন
  6. কিন্তু e-learning ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো সময় আপনার ক্লাস করতে পারবেন নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী।
  7. ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকাকালীন সময়ে বা বাসে চড়ার সময় যে কোনও জায়গা থেকে, বাড়ি থেকে আপনার প্রতিদিনের ক্লাস করতে পারবেন।
  8. বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শিখতে/ কোর্স করতে পারবেন, ই-লার্নিং আপনাকে বিশ্বের যে কোনও কোণায় অবস্থিত যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে শেখার সুযোগ দেয়।
  9. ই-লার্নিং শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করতে দেয় যা পরীক্ষামূলক পরীক্ষণ, পাঠ, বক্তৃতা এবং অন্যান্য স্কুল কাজের জন্য নিখুঁত।
  10. ই-লার্নিং এর মাধ্যমে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া, নিবন্ধগুলি পড়তে এবং ভিডিও দেখার সুযোগ দেয়।
  11. আলোচনা বোর্ড এবং আড্ডার মাধ্যমে, আপনি অনলাইনে সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং যদি কোনো পাঠ্য বিষয়ে সমস্যা থাকে তবে আপনার সন্দেহগুলিও আপনার কোর্স এক্সপার্টদের সাথে শেয়ার করে সমাধান করতে পারবেন।

ই-লার্নিং বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সমূহ

ই-লার্নিং এর অনেক বেশি সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশের মতো দেশে ই-লার্নিং বাস্তবায়নে কিছু সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ‌ দেশি লার্নিং বাস্তবায়নে এই চ্যালেঞ্জগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-

১. দারিদ্রতা:

আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ বিশেষ করে যারা গ্রামে বসবাস করে তারা অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ক্রয় করার মত বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো সেই পরিমাণ অর্থ তাদের কাছে থাকে না। তাই দারিদ্রতা ই-লার্নিং বাস্তবায়নে একটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

২. সচেতনতা সৃষ্টি:

আমাদের দেশে এখনো অনেক মানুষ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পাট গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন নয়।

সরকারের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পাঠদান পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি একটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পাঠদান সম্পর্কে অবগত এবং এর সুবিধা বোঝানো অনেক কষ্টকর বিষয়।

৩. সুবিধার অভাব:

ই-লার্নিং বাস্তবায়নে যে সকল সুবিধা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সে সকল সুবিধা অনেক অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। যেমন সকলের নিকট ইন্টারনেট এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দেওয়া একটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ‌

৪. পর্যাপ্ত রিসোর্স তৈরি:

ই-লার্নিং এর জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পর্যাপ্ত রিসোর্স যা আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে খুব কম পরিমাণে ই-লার্নিং এর উপকরণ তৈরি হয়। তাই এ লার্নিং কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার জন্য পর্যাপ্ত রিসোর্স তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

৫. শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করণ:

দেশের সকল শিক্ষককে ই-লার্নিং এর পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত করণ ই-লার্নিং বাস্তবায়নের জন্য অত্যাবশ্যক। একজন শিক্ষক ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঠদান করতে না পারলে কোনভাবেই ইরানি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তাই দেশের সকল স্তরের শিক্ষককে একসাথে ইরানি কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা বা ব্যবহার করা পদ্ধতি শেখানো একটা চ্যালেঞ্জ।

৬. স্বল্পমূল্যে প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহ:

প্রযুক্তি পণ্য সমুহের দাম অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করে ইরানি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কঠিন বিষয়।

তাই সরকারের পক্ষে সকল মানুষের কাছে ই-লার্নিং এর প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তি পণ্য সমুহের দাম কমানো এবং ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

ই-লার্নিং এর মাধ্যমে কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জন

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে একজন মানুষ চাইলেই ঘরে বসে বিভিন্ন কমেন্ট দেখে ভিডিও দেখে নিজের দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারে।

এখন অনেকেই বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোর্স করে বা বিনামূল্যে ভিডিও দেখে অনলাইনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নিচ্ছে। ই-লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিকট পাঠ দান ও পাঠ গ্রহণ কার্যক্রম অনেক বেশী আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ হয় শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

এই প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখা গেলে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি দক্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ জনবলে পরিণত হবে।

ই-লার্নিং এর সম্ভাবনা

ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দেবে ই-শিক্ষা। আর কোনো শিক্ষা পদ্ধতিতেই এত বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান বলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটাই বলি, আমি বাংলাদেশে বুয়েট ও আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। কিন্তু কোনোখানেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী একসাথে আমার ক্লাস করছে এমন হয়নি। আমার যে সীমিত জ্ঞান বা শিক্ষা আছে, তা বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারাটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের এখন এ সুযোগ করে দিয়েছে। আর আরেকটা ব্যাপার- মুক্ত জ্ঞানের বিসত্মার। আসলে শিক্ষার খরচ কখনই লাখ লাখ টাকা হওয়ার কথা না। জ্ঞান হলো মুক্ত, স্বাধীন, আর জ্ঞানদান করলে তা বেড়ে যায়। প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলের মাধ্যমে জ্ঞানের বিসত্মার করার খরচ অনেক। শিক্ষকদের বেতন বা ভবন নির্মাণের কারণে সবার জন্য শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয়, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে। কিন্তু ই-শিক্ষার মাধ্যমে খুব অল্প খরচে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব জ্ঞানের আলো, যে আলো পাল্টে দেবে তাদের জীবনকে, পাল্টে দেবে আমাদের এ পৃথিবীকে। ই-শিক্ষার ভবিষ্যৎটা তাই উজ্জ্বল, সম্ভাবনাময় এবং দুনিয়া কাঁপানো।

উপসংহার

ই-লার্নিং শিক্ষার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই ব্যবস্থা মানুষের শ্রম যেমন লাঘব করেছে, তেমনি বহুগুণে সাশ্রয় ঘটিয়েছে সময় ও অর্থের। আমাদের দেশেও ই-লার্নিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ই-লার্নিং এ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী রূপান্তর ঘটাতে পারে।

সকল বিষয়ের আপডেট তথ্য পেতে আমাদের Facebook page ও Facebook group এ যোগ দিন।

আরও দেখুনঃ

  • ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্র ও সুবিধা সমূহ
  • প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব : ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব

ক. স্ফুটনাংক কাকে বলে?
খ. কৈ মাছের জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রয়ােজন কেন ব্যাখ্যা কর।
গ. খােকনের বি এম আই নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকে পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় খাবার গুলাে খােকনের শারীরিক দক্ষতা অটুট রাখতে কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে বিশ্লেষণ কর।

Life

Life is one of the most active members of our writing team. She puts his best foot forward to bring the trending news and Education topic. Life is a great writer too. Her pieces are always objective, informative and educative.
Back to top button