জমির মালিকানা বের করার উপায়
জমির মালিকানা নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে জমি। আর আপনার নামে কতটুকু জমি রয়েছে, এটা সঠিকভাবে জেনে রাখাও জরুরী। এতে করে ভুল মালিকানা দাবি, জালিয়াতি কিংবা জমি সংক্রান্ত বিবাদের মত সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব হয় । অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন জমির মালিকানা বের করা খুবই কঠিন।
কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের আইনী কাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে জমি সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আপনি জমির মালিকানা বের করার উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে খুব সহজেই জানতে পারেন ঠিক কতটুকু জমি রয়েছে আপনার নামে। আজকের নিবন্ধে আমরা জানাবো– অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায় এবং দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর ও নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই-করনের নিয়ম সম্পর্কে খুঁটিনাটি।
আরো দেখুনঃ
- জমির মালিকানা বের করার উপায়
- ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম – ইতালি ভিসা আবেদন ফরম
- অনলাইন পাসপোর্ট তৈরির পদ্ধতি বাংলাদেশ
- অনলাইনে এনআইডি কার্ড চেক করার নিয়ম
- মালয়েশিয়া ই ভিসা চেক অনলাইন । মালয়েশিয়া ই ভিসা চেক করার নিয়ম
জমির মালিকানা বের করার উপায় | নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই
প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। আর তাইতো বর্তমান সময়ে অনলাইন ইন্টারনেটে সার্চ করেই আপনি তাৎক্ষণিক সময়ের মধ্যেই জমির খতিয়ান এবং মালিকানা খুঁজে বের করতে পারেন। অনেকেই এই বিষয়গুলোকে অনেক বেশি কঠিন মনে করেন, কিন্তু আমাদের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনি জমির মালিকানা বের করার চেষ্টা করেন, আশা করি সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার জন্য কি কি করতে হবে এবং শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করনের জন্য কোন নিয়ম ফলো করতে হবে, সেটা জানতে নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে দেখুন ও পড়ুন।
শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাইয়ের নিয়ম
জমির মালিকানা বের করার উপায় হচ্ছে অনলাইন মাধ্যম। নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে চাইলে–
প্রথমত– নতুন ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন।
দ্বিতীয়ত- সার্চ করুন ই-পর্চা ডট গভর্মেন্ট ডট বিডি মানে সরাসরি নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে ভিজিট করুন www.eporcha.gov.bd ওয়েবসাইটে।
তৃতীয়ত- প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন পূরণ করুন। মানে প্রথমে বিভাগ, অতঃপর জেলার নাম, এরপর উপজেলা, মৌজা কিংবা জে-এল নং সিলেক্ট করুন।
চতুর্থত– তৃতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন হলে চোখ রাখুন ডান পাশে নিচের দিকে, যেখানে লক্ষ্য করলে আপনার চোখে পড়বে “অধিকতর অনুসন্ধান” লেখাটি. মূলত এ পর্যায়ে এখানে ক্লিক করুন।
পঞ্চমত: আপনার সামনে একটি নতুন পেজ দেওয়া হবে যেখানে মালিকের নাম এবং দাগ নম্বর এর দুটি অপশন থাকবে। যেহেতু আপনি নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে চাইছেন তাই এখানে ক্লিক করবেন “মালিকের নাম” অপশনটিতে।
ষষ্ঠমত– মালিকের নাম বসিয়ে অনুসন্ধান করবেন। ব্যাস তাহলে আপনি উক্ত ব্যক্তির নামে কোন জমি রয়েছে, কতটুকু জমি রয়েছে তা দেখতে পাবেন।
তবে হ্যাঁ, একই নামের বিভিন্ন ব্যক্তি থাকার কারণে কখনো কখনো এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জমির মালিকানা বের করার উপায় হিসেবে আমরা আরও কিছু পরামর্শ দেব। তার আগে আরেকটি বিষয়, আপনি চাইলে এই কাজটা কিন্তু আপনার মোবাইলের মাধ্যমে কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর সাহায্য নিয়েও করতে পারেন। তো কিভাবে আপনি আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন ব্যবহার করে জমির মালিকানা বের করবেন তা জেনে নিন এখনই।
মোবাইলের মাধ্যমে জমির মালিকানা বের করার উপায়
মোবাইলের মাধ্যমে জমির মালিকানা বের করতে চাইলে প্রথমত আপনাকে প্রবেশ করতে হবে গুগল প্লে স্টোরে। সেখানে গিয়ে আপনি অনুসন্ধান করবেন জমির মালিকানা বের করার এপ্স এমন কিছু লিখে। এ পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু অ্যাপস সাজেস্ট করা হবে। যেমন– ekhatian, Dolil, ভূমি সেবা ও নাম দিয়ে জমি- খুঁজুন, নাম জারি, ভূমি উন্নয়ন কর সহ প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি ইন্সটল করে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন পূরণ করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই জমির মালিকানা বের করতে পারবেন।
অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার নিয়ম | জমির মালিকানা চেক
অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা আপনি দুইটি উপায়ে বের করতে পারবেন। আর ইতিমধ্যে আমরা একটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছি। এছাড়াও খতিয়ান নাম্বার/জমির দাগ নাম্বার বসিয়ে জমির মালিকানা বের করা যায়। এজন্য মূলত ওই একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আপনার খতিয়ান নাম্বার না জানা থাকে সেক্ষেত্রে কি করবেন। এজন্য আপনি সরাসরি ভূমি রেকর্ড এবং জরিপ অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট (https://dlrs.gov.bd/site/view/notices) ভিজিট করবেন। অতঃপর খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান অপশনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন পূরণ করার মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন সঠিক খতিয়ান নাম্বার। এরপর www.eporcha.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে খুব সহজেই জমির মালিকানা বের বের করার নিয়ম অনুযায়ী জেনে নিবেন যে আপনার নামে ঠিক কতটুকু অংশ রয়েছে।
তো পাঠক বন্ধুরা, এখন আসুন আলোচনার শেষ পর্যায়ে জমির মালিকানা বের করার বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেসই তো প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর সম্পর্কে জেনে নেই। পাশাপাশি এর বাহিরে যদি আপনার আরো কিছু জানার বা জিজ্ঞাসাবাদ করার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টে জানিয়ে দিতে পারেন। পাশাপাশি এ ধরনের ইনফর্মেশন মূলক আর্টিকেল নিয়মিত পেতে ফলো করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট।
জমির মালিকানা বের করার বিষয়ে প্রশ্নোত্তর
খতিয়ান ও পর্চা বলতে কি বুঝায়?
✓ খতিয়ান এবং পর্চা দুইটি একি জিনিস। মূলত বিভিন্ন এলাকায় এটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য সরকারি যে দলিল রয়েছে তাকে খতিয়ান বলে। অতএব সহজভাবে বললে বলা যায়, পর্চা অথবা খতিয়ান হচ্ছে জমির জরিপের সময় প্রস্তুত করা একটি রেকর্ড বা নথি।
খতিয়ান-পর্চাতে কি কি বিষয় উল্লেখ থাকে?
✓ জমির খতিয়ান এ বা জমির পর্চা তে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সাধারণত উল্লেখ থাকে। যথা:
- দান নং, মৌজা নং, খতিয়ান নং, বাট্রা নং, এরিয়া নং।
- নিজস্ব জমি হলে তার বিবরণ।
- জমির দখলদার এর নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, মাতার নাম সহ প্রকৃতি ইনফরমেশন।
- দখলকা এর জমির অবস্থা, কত শতাংশ জমি এবং জমির সিমানা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা।
- খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমাণ ও 28,29,30 বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য উল্লেখ থাকার পাশাপাশি খাজনা বৃদ্ধির কারণ থাকলে তার বিবরণ দেওয়া থাকে।
- এছাড়াও ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধার্তি খাজনা ও ইজারা কৃত জমির জন্য জমি মালিকের অধিকার সম্পর্কে কিছু বিষয় বর্ণনা করা থাকে জমির খতিয়ান পত্রে।
জমির খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি?
✓ জমির খতিয়ানের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তবে আমাদের বাংলাদেশের জমি কার্যক্রমে খতিয়ান সাধারণত চার প্রকার। সেগুলো হলো–
- আর এস খতিয়ান
- সিএস খতিয়ান
- এস এ খতিয়ান
- বিএস খতিয়ান
জমির মালিকানা বের করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন জমির মালিকানা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ কেন! দেখুন আপনি যখন কোন জমি কিনবেন তখন কিন্তু অবশ্যই জমির সঠিক মালিক কে, সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। আপনি যদি জমি বিক্রি করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রেও অন্যরা এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার কাছ থেকে জমির মালিকানার ব্যাপারে প্রমাণ চাইবে। আর বর্তমানে জমির বিষয়ে অনেক বেশি ভেজাল দেখা যায়। প্রতারকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে এ বিষয়ে। তাই আপনি যদি প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে চান, কিংবা জমি সংক্রান্ত ভেজাল থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে জমির মালিকানা বের করার প্রয়োজন।
নাম দিয়ে জমির মালিকানা খুঁজে না পেলে করণীয় কি?
✓ অনেক সময় শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না এজন্য অনেকেই বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সেটা হচ্ছে দাগ নম্বর অথবা খতিয়ান নম্বর বসিয়ে অনলাইনে অনুসন্ধান করা। যে নিয়ম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। অতএব নাম দিয়ে জমির মালিকানা খুঁজে না পেলে আপনার করণীয় কাজ হবে খতিয়ান নাম্বার বসিয়ে জমির মালিকানা খোঁজা।
বাংলাদেশে জমির মালিকের নাম কিভাবে চেক করা যায়?
✓বাংলাদেশের জমির মালিকের নাম চেক করতে হলে প্রথমত জমির খতিয়ান চেক করতে হবে। আপনি যদি খতিয়ান নাম্বার অনুসন্ধান করেন তাহলে জমির মালিকের নাম পেয়ে যাবেন। আর যদি অনলাইনের মাধ্যমে এটা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোতে তল্লাশি করতে পারেন।
খতিয়ান এবং দলিল কি একই জিনিস?
✓না, খতিয়ান হলো জমির রেকর্ড, আর দলিল হলো জমি ক্রয়-বিক্রয়ের আইনগত প্রমাণ।
জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে কত সময় লাগে?
✓ এটি নির্ভর করে নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই প্রক্রিয়ার উপর। সাধারণত ৭-১৫ কার্যদিবস সময় লাগে।
অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভব?
✓ হ্যাঁ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে এটি সম্ভব।
জমি সংক্রান্ত মামলা থাকলে কীভাবে মালিকানা বের করব?
✓ আদালতের রেকর্ড এবং রায় পরীক্ষা করতে হবে।
জরিপ রিপোর্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
✓ জমির সঠিক সীমানা এবং মালিকানা নির্ধারণে জরিপ রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্যাক্স রসিদ কি জমির মালিকানার প্রমাণ দেয়?
✓ না, এটি মালিকানার একমাত্র প্রমাণ নয়, তবে এটি সহায়ক প্রমাণ।