Assignment

১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরতপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর?

১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরতপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর?

1st Week Class 9 BGS Assignment 2024

অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ

১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরতপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর? যুক্তিসহ তোমার মতামত তুলে ধর।

নির্দেশনা

১. উল্লিখিত সালগুলির সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলি ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করবে
২. যে ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তা ব্যাখ্যা করবে।
৩. উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করবে
৪. নিজন্থ মতামত প্রদান করবে।

উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত সালগুলাে হলাে, ১৯৫২, ১৯৬৬,১৯৭০। নিম্নে এই সালগুলাের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলা:

১৯৫২ সাল (ভাষা আন্দোলন)

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।
| ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারের প্রাধান্য পায়। পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার চল ছিলাে খুবই কম। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ | (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন) এই সিদ্ধান্তকে মােটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে শুরু হয়। আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে। এই ঘােষণার ফলে আন্দোলন আরাে জোরদার হয়ে ওঠে। পলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল। ইত্যাদি বে-আইনি ঘােষণা করে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অনেক ছাত্র ও আরাে কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে একটি মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-এর কাছে এলে পুলিস মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন আব্দুস সালাম,রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরাে অনেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা পূর্ব। পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ও তীব্র আকার ধারন করে। অবশেষে পাকিস্তান। সরকার বাধ্য হয় বাংলা ও উর্দুভাষাকে সমমর্যাদা দিতে।

১৯৬৬ সাল (ছয় দফা)

১৯৬৬ সালে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ৬ দফা। ঐতিহাসিক ৬ দফার প্রবক্তা জাতির | পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব । বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রাম সুস্পষ্ট রূপ লাভ করে ছয় দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবিনামায়। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দলসমূহের এক। সম্মেলনে যােগদান করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ব সেখানে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দফাগুলাে হলাে:

১ম দফা : লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির । সর্বজনীন ভােটাধিকারের ভিত্তিতে সকল প্রাপ্ত বয়স্কের ভােটে জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলাে গঠিত হবে ।

২য় দফা : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। অবশিষ্ট সকল বিষয় প্রদেশের হাতে থাকবে ।

৩য় দফা : দেশের দুই অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজ বিনিময়যােগ্য মুদ্রা চালু থাকবে অথবা দেশের দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে। তবে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে এক অঞ্চলের মুদ্রা ও মূলধন অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে।

৪র্থ দফা : সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ও কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে তবে কেন্দ্রিয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদায় কৃত অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রিয় সরকার পাবে ।

৫ম দফা ; বৈদেশিক বাণিজ্যি ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা থাকবে। সকল প্রকার বৈদেশিক চুক্তি ও সহযােগিতার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকার দায়িত্ব পালন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা যুক্তিযুক্ত হারে উভয় সরকার কর্তৃক মেটানাে হবে।

৬ষ্ঠ দফা : আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আঞ্চলিক সরকারগুলাে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বাহিনী (প্যারা মিলিশিয়া) গঠন ও পরিচালনা করতে পারবে।

ছয় দফা কর্মসূচির মূল আবেদন ছিল পূর্ব পাকিস্তান শুধু একটি প্রদেশ নয় বরং একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । সকল প্রকার শােষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটানােই ছিল এর লক্ষ্য।

১৯৭০ (নির্বাচন)

অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিযা খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। জাতির উদ্দেশে ̈ এক বেতার ভাষণে তিনি ১৯৭০ সালের ৫ই অক্টোবর সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা প্রদান করেন।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি রাজনৈতিক দলসমূহ

জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। প্রাদেশিক পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ডিসেম্বর। নির্বাচনে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি.পি.পি) , ন্যাপ (ওয়ালী খান), মুসলিম লীগের বিভিন্ন গ্রুপ, জামায়াত-ই-ইসলামী, জমিয়তে উলামা-ই-ইসলাম, জমিয়তে উলামা-ই-পাকিস্তান, নিজামে ইসলাম, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পি.ডি.পি) ইত্যাদি।

ফলাফল

নির্বাচনী ফলাফলনির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায, জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন (৭টি মহিলা আসনসহ) লাভ করে। জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়। জাতীয় পরিষদে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮৮টি আসন লাভ করে ভূট্টোর পিপলস পার্টি। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসন লাভ করে। প্রদত্ত ভোটের ৮৯ ভাগ পায় দলটি। আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ১০টি মহিলা আসন সহ নির্বাচনে ৩১০টি আসনের মধ্যে সর্বমোট ২৯৮টি আসনলাভ করে।

১৯৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব

১৯৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বিপাকে পড়ে যায়। শেখ মুজিব তথা বাঙ্গালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। নিম্নে ১৯৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হল-

(১) নির্বাচনের মধ ̈দিয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জয় হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদেরই বিজয়।

(২) জনগণ ছয়দফা প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভ করেআওয়ামী লীগের ছয় দফা থেকে সরে আসার পথ খোলা ছিল না।

(৩) এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়, পাকিস্তান ভৌগোলিক কারণে কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেননা পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক দল বা নেতার পাকিস্তনের দু’অংশে গ্রহণযোগ ̈তা ছিল না।

Life

Life is one of the most active members of our writing team. She puts his best foot forward to bring the trending news and Education topic. Life is a great writer too. Her pieces are always objective, informative and educative.
Back to top button