ইংরেজ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।
করনা ভাইরাসের কারণে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণীতে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো এসাইনমেন্ট লিখন।
বর্তমানে উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদরাসাসমূহে সকল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট লেখার কাজ চলছে। এবং এর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে প্রতিটি ছাত্রকে পরবর্তী শ্রেণীতে উন্নীত করা হবে।
আপনারা জানেন আমরা প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র সমাধান করছি। আজকে নবম শ্রেণীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নের সমাধান করব।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্নের সমাধান করার জন্য এই লিখাটি প্রকাশ করা হচ্ছে। এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ইংরেজি শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। তাহলে আর দেরি না করে চলুন প্রশ্নের উত্তরটা জেনে নেয়া যাক।
আরও দেখুনঃ
ক) ইতিহাস পাঠ করা প্রয়ােজন কেন?
খ) প্রাচীন বিশ্বের উল্লেখযােগ্য সভ্যতাগুলাে কী কী?
গ) প্রাচীন বাংলার মানচিত্র অংকন করে জনপদগুলাের নামসহ বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত কর।
বাংলার সম্পদের টানে ইউরোপীয় শক্তির উত্থান হয়েছিল। বাণিজ্য বিস্তারের যুগে ইউরোপের প্রভাবশালী নৌ-শক্তির অধিকারী দেশগুলো সম্পদের সন্ধানে বহির্বিশ্বে বেরিয়ে পড়ে। তাদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল পূর্ব দেশগুলো, বিশেষত ভারতবর্ষ। এই উদ্দেশ্য থেকেই ১৬০০ সালে ইংল্যান্ডে স্থাপিত হয় ‘দি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় প্রবেশ করে ১৬৩০ সালে। ‘ফ্রেঞ্চ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করে ফরাসিরা ১৬৬৪ সালে বাংলায় প্রবেশ করে এবং চন্দননগর ও চুঁচুড়ায় শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। আর এ যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলায় ইংরেজ শাসনের ভিত্তি শুরু হয়। তবে সাথে সাথেই তারা নিজেদের হাতে শাসনভার তুলে নেয়নি। তাদের কথা শুনবে, এমন দেশীয় লোকদের দিয়ে শাসনকাজ শুরু করে। তারা প্রথমে মীর জাফর ও পরে মীর কাশিমকে সিংহাসনে বসায়। মীর কাশিম ছিলেন কিছুটা স্বাধীনচেতা। এ কারণে ইংরেজদের সাথে দুইবার যুদ্ধ হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। এরপর থেকেই ইংরেজরা পুরোপুরি ক্ষমতা দখল করে। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ১০০ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে শাসন চালায়। এই শাসনামল ইতিহাসে ‘কোম্পানির শাসনামল’ নামে পরিচিত।
বাংলায় ইংরেজ শাসনের নেতিবাচক প্রভাব
- প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনকালে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ এ দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়।
- বাংলার অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি ও এককালের তাঁতশিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।
- বাংলার শিল্প ও বাণিজ্য নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অসংখ্য কারিগর বেকার হয়ে যায়।
- কোম্পানির শাসনের সময়ে ১৭৭০ সালে বাংলায় ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়।
ইংরেজ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবতনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর
সমুদ্রপথে ইউরোপীয় বণিকদের সাফল্য, প্রাচ্যের ধন-সম্পদের প্রাচুর্য, ইংরেজ বণিকদেরকেও এ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যে উৎসাহিত করে। এই উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের একদল বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে একটি বণিক সংঘ গড়ে তোলে। বণিক সংঘটি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাণী এলিজাবেথের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি প্রাচ্যে একচেটিয়া বাণিজ্য করার সনদপত্র লাভ করে। এই সনদপত্র নিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধি বাণিজ্যিক সুবিধা লাভের আশায় আকবরের দরবারে হাজির হন। এরপর ক্যাপ্টেন হকিন্স ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে জেমসের সুপারিশপত্র নিয়ে বাণিজ্য সমপ্রসারণের লক্ষ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জেমসের দূত হয়ে জাহাঙ্গীরের দরবারে আসেন স্যার টমাস রো। সম্রাটের কাছ থেকে তিনি ইংরেজদের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নেন। ১৬১৯ খ্রিঃ তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে কোম্পানি সুরাট আগ্রা, আহমদাবাদ প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে তাদের ভিত্তি মজবুত করে ফেলে।
কোম্পানি তার দ্বিতীয় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে মসলিমপট্টমে। এরপর বাংলার বালাসোরে আরেকটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এদের শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলে এরা করমণ্ডল (মাদ্রাসা শহর) উপকূলে একটি দুর্গ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। বাংলার সুবেদার শাহ সুজার অনুমোদন লাভ করে তারা ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এভাবে কোম্পানি কাশিমবাজার, ঢাকা, মালদহেও বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে।
১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথরিনের সঙ্গে বিয়ের যৌতুক হিসেবে লাভ করেন বোম্বাই শহর। অর্থাভাবে চার্লস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে শহরটি বিক্রি করে দেন। পরবর্তীকালে এই বোম্বাই শহরই কোম্পানির প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়।
জব চার্ণক নামে আরেকজন ইংরেজ ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ১২০০ টাকার বিনিময়ে কোলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারী স্বত্ত্ব লাভ করেন। ভাগীরথী নদীর তীরের এই তিনটি গ্রামকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে কোলকাতা নগরীর জন্ম হয়। এখানেই কোম্পানি ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নাম অনুসারে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করে। ধীরে ধীরে এটি ইংরেজদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা এবং রাজনৈতিক স্বার্থ বিস্তারের শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয়।
ইংরেজ কোম্পানির ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায় যখন দিল্লির সম্রাট ফারুখশিয়ার তাদের বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার প্রদান করেন। একই সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রা প্রচলনের অধিকারও কোম্পানি লাভ করে। সম্রাটের এই ফরমানকে ইংরেজ ঐতিহাসিক ওরমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মহাসনদ বা ম্যাগনা কার্টা বলে উলে- করেন। এইখ অধিকার লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে অগ্রসর হতে থাকে।
N.B: আশা করছি তোমরা ইংরেজ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়ে ভালভাবে ধারণা লাভ করতে পেরেছো;এই আলোকে নবম শ্রেণীর ইতিহাস ৪র্থ অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর সুন্দরভাবে লিখতে পারবে।সকল বিষয়ের আপডেট তথ্য পেতে আমাদের Facebook page ও Facebook group এ যোগ দিন।