Assignment

আমার দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলনকৃত ব্যায়াম ও তার উপকারিতা

আমার দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলনকৃত ব্যায়াম ও তার উপকারিতা। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির ১০ম সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আলোকে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠ্যবই থেকে একটি অ্যাসাইনমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট।

শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় এসাইনমেন্ট এর সাথে ষষ্ঠ শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে যথা নিয়মে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে শিক্ষকের নিকট জমা দিতে হবে।

অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ আমার দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলনকৃত ব্যায়াম ও তার উপকারিতা

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনাঃ ১. ভূমিকা, ২. ব্যায়াম কি? ৩. ব্যায়ামের সাথে জীবনের সম্পর্ক, ৪. তোমার অনুশীলন কৃত ব্যায়ামের তালিকা ও প্রকার, ৫. উপকারিতা, ৬. সিদ্ধান্ত।

৬ষ্ঠ শ্রেণি ১০ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

নমুনা উত্তরঃ

ব্যায়ামের উপকারিতা জানা আছে সবারই কমবেশি। তবে নিয়ম করে ব্যায়াম করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কদিন ব্যায়াম করলেন, আবার কদিন বাদ দিলেন, এভাবে অনিয়ম হলে চলবে না।

হঠাৎ ব্যায়াম ছেড়ে দেওয়াও ঠিক নয়। কিছুদিন খুব কঠোর পরিশ্রমের ব্যায়াম করে আবার কিছুদিনের জন্য ব্যায়াম একেবারেই বাদ দিয়ে দিলেন, এমনটা করবেন না। এর চেয়ে বরং সহজ ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস ধরে রাখুন।

যাঁরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম করেন বা হাঁটাহাঁটি করেন, তাঁরা যদি হুট করে ব্যায়াম ছেড়ে দেন, তাহলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

শরীর ফিট রাখতে যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁরা ব্যায়াম ছেড়ে দিলে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে তো বিঘ্ন ঘটবেই। যাঁরা ওজন কমানোর ব্যায়াম করেন তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম ছেড়ে দিলে হুট করে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে; কারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে যেমন নিয়মিত হারে ক্যালরি পোড়ানো হচ্ছিল, সেটি আর সম্ভব হয় না।

সুস্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম চাই। নিয়মিত ব্যায়ামে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের জন্য সময় বের করা এমনিতেও কঠিন; তা ব্যস্ততার জন্যই হোক আর আলসেমির কারণেই হোক। কাজেই একবার ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সেটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করাই শ্রেয়। অভ্যাস ছুটে গেলে নতুন করে অভ্যাস তৈরি করা কঠিন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করুন। ভারী ব্যায়াম করতে পারলে অবশ্য সপ্তাহে ৭৫ মিনিটই যথেষ্ট।

শারীরিক ব্যায়ামের ১০টি উপকারিতা

০১। দেহের শক্তি ও ভারসাম্য বৃদ্ধি করেঃ

শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা গুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে এটি দেহের শক্তি ও ভারসাম্য বাড়াতে যথেষ্ট সাহায্য করে। ব্যায়াম বা শরীরচর্চা স্বাস্থ্যবান এবং স্বাস্থ্যহীন উভয় শ্রেণির মানুষের প্রকৃত এনার্জি বুস্টার বা শক্তি বৃদ্ধিকারী। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ক্রমাগত ক্লান্তি বা অবসাদে ভুগছেন এমন ৩৬ জন স্বাস্থ্যবান মানুষ নিয়মিত ছয় সপ্তাহ ব্যায়াম করায় তাদের ক্লান্তির অনুভূতি কমে যায়। তাহলে কেনই বা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করবেন না। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দেহের শক্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

০২। ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন করে থাকে। সব উপায় গুলোর মধ্যে ২ টাই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী, ১। খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা ২। নিয়মিত ব্যায়াম করা করা। যদি সকালে ৩০ মিনিট এবং বিকালে ৩০ মিনিট জজ্ঞিং করেন, জিমে যান বা হাঁটেন তাহলে, ওজন অনেকটা কমে আসবে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে শরীর স্বাস্থ্য উন্নত হয় ও যথেষ্ট পরিমাণে ভালো থাকবে।

০৩। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করেঃ

নিয়মিত ব্যায়াম করুন শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন। রোগ প্রতিরোধ করার অনেক প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। তবে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করার দ্বারাও বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা যায়। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় হাঁটলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যে কোন ধরনের ব্যায়াম স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক গঠন উন্নত হয়। এছাড়াও নিয়মিত শরীরচর্চায় রক্তচাপ এবং রক্তে চর্বির মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে ব্যায়াম।

০৪। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেঃ

ইতোমধ্যে আমরা অনেকেই জানি পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটি করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে না। যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচিত খাবার নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত সকালে ও বিকালে ব্যায়ামের জন্য বের হওয়া। প্রতিদিন ৩০ মিনিট সকালে ও বিকালে নিয়মিত জজ্ঞিং বা যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যাদের নাই তাদের ও উচিত অন্ততপক্ষে সকাল ও বিকালে ২০ মিনিট করে হাঁটা। তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

০৫। অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়ঃ

অক্সিজেন ছাড়া সবাই অচল, আমরা সবাই জানি। ঠিক পর্যাপ্ত ও স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন না গ্রহন করতে পারলেও অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। শ্বাস নিশ্বাস সঠিক সময় পর্যাপ্ত গ্রহন না করতে পারা মানে, আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। যারা অক্সিজেন সঠিক ভাবে নিতে পারছে না, তাদের উচিত ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। তবে প্রাথমিক ভাবে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত বাতাসে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে ব্যায়াম যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে থাকে।

০৬। মন মেজাজ ভালো ও উৎফুল্ল রাখেঃ

মন মেজাজ ভালো ও উৎফুল্ল রাখতেও এর ভূমিকা অনন্য। এটি আপনার মুড বা মেজাজ উন্নত করে এবং বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমায়। ব্যায়াম মস্তিষ্কের যে অংশে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে ইতিবাচক পরিবর্তন তৈরি করে। এছাড়া এটি মস্তিষ্কের হরমোন সেরোটোনিন এবং নরপাইনফ্রাইন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে, যা বিষণ্নতার অনুভূতি উপশম করে। আপনি যখন দিনের শুরতে ২০/৩০ মিনিট খোলামেলা মনোরম পরিবেশে জগিং করতে যাবেন, তখন সারাদিনটা ভালো যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে এবং মন মেজাজ ভালো ও উৎফুল্ল থাকবে।

০৭। পর্যাপ্ত ভালো ঘুমের জন্য উপকারীঃ

পর্যাপ্ত, প্রশান্তিতে ঘুমাতে চান? তাহলে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। সকাল, বিকাল ব্যায়াম করলে অনেক উপকারের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটা পাবেন, সেইটা হচ্ছে প্রশান্তিতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারবেন। শারীরিক ভাবে আমরা পরিশ্রম করলে, দেখবেন শরীরের ক্লান্তি চলে আসে ও খুব তারাতারি ঘুম চলে আসে। অনেকে বলবেন তাহলে শারীরিক পরিশ্রম করলেই হয়, ব্যায়াম করার তো প্রয়োজন নেই। হাঁ আছে, ব্যায়াম করলে একসাথে ২টা কাজ হয়, শারীরিক পরিশ্রম ও হয় এবং মন মেজাজ অনেক ভালো হয়, যার ফলে প্রশান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।

০৮। হাড়ের গঠনকে শক্তিশালী গড়ে তোলেঃ

ব্যায়াম উপকারিতা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী এবং খুব তারাতারি যে ফল টা পাওয়া যায়, সেইটা হচ্ছে, হাড় গঠন। অর্থাৎ হাড়ের গঠন বৃদ্ধি করতে ও আরও শক্তিশালি করতে এটি যথেষ্ট অবদান রাখে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের ফলে হাড়ের গঠন অনেক ভালো থাকে, পেশী সুস্থ থাকে এবং আরও শক্তিশালি করে তুলে। বিশেষ করে পায়ের হাড়কে মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

০৯। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এর রয়েছে বিরাট ভূমিকা। নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে স্বল্প চেষ্টায় শরীরে বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে এবং ধমনীর ওপরও চাপ কম পড়ে। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে কম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা-চলা অনেকটা উচ্চ রক্তচাপরোধী ওষুধের মতো কাজ করে। এইজন্য প্রতিদিন সকালে ২০/৩০ মিনিট এবং বিকালে ২০/৩০ হাঁটার বা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এর ফলে শরীর সাস্থ্য একধাপ উন্নত করতে সাহায্য করবে। এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য অবশ্যই ব্যায়াম করা উচিত।

১০। মস্তিষ্ক, স্মরণ শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ

মস্তিষ্ক ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি। এবং কেই বা না চাই মস্তিস্ক ভালো ও সুস্থ রাখতে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা আধৌ জানি না মস্তিষ্ক, স্মরণ শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য যা করছি, সেগুলো উপকারী কিনা। মস্তিষ্ক, স্মরণ শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিট প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশে হাঁটা। এবং পারলে বিকাল বেলায় ও হাঁটতে পারেন। এর ফলে ব্রেইন যথেষ্ট বিনোদন নিতে পারে এবং অনেক রিলেক্স থাকতে পারে। কিছুটা সময় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা কাজের চাপ থেকে বিরত থাকতে পারলে, ব্রেইন অনেক সতেজ হয় এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শেষ কথাঃ

উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা, যেমনঃ স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন যেমন ক্যানসার কাকেক্সিয়া, ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে, বাড়তি চর্বি কমায়, হৃদরোগ বা হৃৎপিন্ড ও রক্তনালীর অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভাইরাসের আক্রমন থেকে দেহকে সুরক্ষিত করে এবং শরীরের সচলতা বজায় রাখে।

Life

Life is one of the most active members of our writing team. She puts his best foot forward to bring the trending news and Education topic. Life is a great writer too. Her pieces are always objective, informative and educative.
Back to top button