মনে কর, ১৯৭১ সালে তুমি ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিচের ঘটনার ক্ষেত্রে তুমি উপস্থিত থাকলে ঐ সময় কী করতে তার বর্ণনা দাও
মনে কর, ১৯৭১ সালে তুমি ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিচের ঘটনার ক্ষেত্রে তুমি উপস্থিত থাকলে ঐ সময় কী করতে তার বর্ণনা দাও
যে কোনাে তিনটি ঘটনার ক্ষেত্রে নিজের অনুভূতি লিখতে হবে
ক) রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনছ;
খ) ২৫শে মার্চ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী;
গ) পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস এলাকাবাসীকে নির্যাতন করছে;
ঘ) মুক্তিবাহিনীকে হানাদাররা তাড়া করছে;
ঙ) ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন দলিলে স্বাক্ষর করছে;
৮ম শ্রেণি ১০ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
দশম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট এ দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যায়নরত ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবই থেকে একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় সপ্তাহে অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবই থেকে প্রথম এসাইনমেন্ট ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যে কোনো ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনার সময়কালসহ একটি পোস্টার করতে দেওয়া হয়েছিল।
রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণঃ-
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেই সময় রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ৩ মার্চ পল্টনের একটি ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এদিন সকাল থেকে রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। তারা ধারণা করছিলেন- বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা আসতে পারে। মঞ্চে গণসঙ্গীত চলছিল সকাল থেকেই।
এদিন সকাল থেকেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং ছাত্র নেতাদের ভিড়। দুপুর ২টার দিকে আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদসহ তরুণ নেতাকর্মীদের নিয়ে শেখ মুজিব তার বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন জনসভার উদ্দেশ্যে। ভাষণ দিতে বাসা থেকে বেরোনোর সময় শেখ মুজিবকে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেছিলেন- তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবে।
৭ মার্চের সেই ভাষণ তিনি নিজের চিন্তা থেকেই দিয়েছিলেন। ভাষণটি লিখিত ছিলো না। সবই তার মনের খাতায় লেখা ছিল। তবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার আগের নির্ধারিত রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্নপথে শেখ মুজিবকে নেওয়া হয়েছিল জনসভায়। সেদিন শেখ মুজিব সেই মঞ্চে একাই ভাষণ দিয়েছিলেন। মঞ্চের কারো কাছ থেকে নেননি কোনো স্লিপ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকো।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু একটা গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা, জয় বাংলা।’
প্রায় ১৮ মিনিটের এই ভাষণে সবদিকই উঠে এসেছিল। এই একটি ভাষণের মাধ্যমে তিনি একটি জাতিকে সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তর করেছিলেন। স্বাধীনতার বীজ তিনি বপন করেছিলেন, বলেছেন তোফায়েল আহমেদ।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন অনেকে বলেছেন, লাঠি, ফেস্টুন হাতে লাখ লাখ মানুষের স্লোগানে মুখরিত থাকলেও শেখ মুজিবের ভাষণের সময় সেখানে ছিল পিনপতন নীরবতা। ভাষণ শেষে আবারও স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাস্তাগুলো।
২৫শে মার্চের গণহত্যা :-
২৫ মার্চ, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধের প্রস্তুতি। এই দুঃসময়ের স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠছে : আগুন জ্বলছে পলাশীর বস্তিতে, বিদ্রোহ ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে, দাউদাউ করে জ্বলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। রাতের শেষ প্রহরে কামানের গর্জন। আগুনের ফুলকি চতুর্দিকে। বাবা বললেন- সম্ভবত সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার নির্দেশে, জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের সামরিক অভিযানে সংঘটিত হচ্ছে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। জাতিসংঘের ঘোষণায় ‘জেনোসাইড’-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন হচ্ছে আজ বাঙালির ওপর। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, জহুরুল হক হলসহ সারা ঢাকা শহরে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছি সারারাত। সকাল সকাল উঠে চললাম একে একে রাশেদ, সুজন ও সায়েমদের বাড়িতে। তাদের এবং তাদের পরিবারের খোজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। গিয়ে দেখি সুজনদের বাড়ির ভাঙচুর, লন্ডভন্ড হয়ে আছে। বাড়িতে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। কি ব্যাপার? কোথায় সবাই? রাশেদ আর সায়েমকে নিয়ে বেরোচ্ছি প্রতিবেশী সবার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। সারারাত যে হত্যাযজ্ঞ চলেছে তাতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি আশা করা নিতান্তই বোকামি। ক্রন্দনে জর্জরিত হয়ে পড়লাম আমরা। আমাদের নিজ নিজ পরিবারের সহযোগিতায় যার যা সামর্থ আছে তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করছে :-
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল জ্যাকব আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়াজির মধ্যে আত্মসমর্পণ চুক্তি নিয়ে যখন দর কষাকষি চলছে, তখন পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল আলোচনার একটা বড় বিষয়। ঢাকায় তখন পাকিস্তানি সৈন্য আর নানা রকম আধাসামরিক বাহিনীর লোকজন মিলিয়ে ৯৪ হাজার সদস্য আটকা পড়েছে।
বিকেল ৪ টার সময় বাবা হাসিমুখে এসে বলছে- চলো, আমরা রমনা রেসকোর্স ময়দানের দিকে যাই। তোমার বন্ধুদেরও আসতে বলো। শুনলাম, বাঙালিদের জন্য আজ একটা খুশির সংবাদ অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। প্রস্তুত হয়ে রওনা দিলাম রমনা রেসকোর্স ময়দানের উদ্দেশ্যে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন। আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল “INSTRUMENT OF SURRENDER”। এই ঘটনাকে ঢাকার পতন বলেও ডাকা হয়।
রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৫শে মার্চের গণহত্যা।
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার এবং দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের নিকট সংরক্ষিত আছে ও তৃতীয় প্রস্থ ঢাকার শাহবাগ জাদুঘরে আছে। যে টেবিলে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ঢাকা ক্লাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে।
‘ডিসেম্বরের সূর্যের দিকে মুখ করে ম্রিয়মাণ বিষন্ন মুখে ক্যানটনমেনটের দিকে তাকিয়েছিলেন পাক বাহিনীর দীর্ঘতম লে. জেনারেল ফরমান আলি। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্যানটনমেনটের বিভিন্ন ইউনিট লাইনে তাঁর বাহিনীর ৩০ হাজার পরাজিত সৈন্য নিজেদের হাতিয়ার তুলে দিচ্ছে। আজ থেকে বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ পাক সৈন্য ভারতের যুদ্ধবন্দী।’ বন্ধুরাসহ বিজয়ের পতাকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি। খুশির জোয়ারে ভাসছে সারা বাংলা।